বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কিত সবকিছু

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান ২০২৩ দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনীতির অপার সম্ভাবনা নিয়ে শিগগিরই চালু হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল। চট্টগ্রাম শহরের কোলঘেঁষা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এ টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার বা ২ দশমিক শূন্য ৬ মাইল।

টানেলের এক প্রান্তে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা ও অন্য প্রান্তে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা উপজেলা। টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।

বর্তমানে এটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। টানেলটি চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন হবে। ফলে বাঁচবে সময় ও খরচ। ভবিষ্যতে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করবে এ টানেল।

ভূমিকা

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে নির্মিত টানেলের নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল।’ কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সড়ক সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গ মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে।

কর্ণফুলী সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ হলে এটিই হবে বাংলাদেশ এর প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে চীনের সাংহাই শহরের ন্যয় চট্রগ্রাম শহরকে “One City Two Town” মডেল এ গড়ে উঠবে।

চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই সুড়ঙ্গ নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এবং কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড) কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।

কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে। টানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই টিউব নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ২০২২ সালে। টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে

ইতিহাস

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং (Xi Jinping) প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

অর্থায়ন

সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মিত হবে। মূল টানেল ২টি টিউব সম্বলিত ও ৩.৪ কি.মি: দীর্ঘ এবং টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কি:মি: এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ (Viaduct) সম্পন্ন এই টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮৮০.৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ Bangladesh সরকারের অর্থ সহয়তা ৩৯৬৭.২১ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের অর্থ সহয়তা ৫৯১৩.১৯ কোটি টাকা।

নির্মান তথ্য

সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ হাতে পেয়েছে চীনের এক নির্মাণ সংস্থা।অনুমান করা হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে টানেল বা সুড়ঙ্গটির নির্মাণ শেষ হবে। সুড়ঙ্গটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার হলেও এর সঙ্গে ৫ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড)যুক্ত হবে।

প্রবেশের পথ

সরকারের বর্তমান প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশ পথ হবে, বিমান বন্দর অর্থাৎ পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ পশ্চিম অংশের কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে নৌবাহিনী এভিনিউ এর সামনে।

বহির্গমন পথ

কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা প্রান্তে সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিঃ এর মাঝামাঝি স্থান দিয়ে। টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে মোট ৯.৩৯২ কিলোমিটার। ডুয়েল অর্থাৎ দুই লেনের টানেল এইটি। শিল্প ড্রিভেন মেথন পদ্ধতিতে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর তলদেশ থেকে টানেলের গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার বা কমপক্ষে ৩৬ ফুট থেকে ১০৮ ফুট পর্যন্ত গভীর।

টানেল নির্মানের কারণ

সরকারি বিভিন্ন তথ্য বিবরণীতে দেখা যায় উক্ত টানেল নির্মাণের পিছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। চীনের কুনসিংকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ হয়ে ভারতের সাথে যুক্তকারী করিডোর বেল্ট এন্ড কোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরই) উদ্দেশ্য হচ্ছে :

 

কর্ণফুলী টানেল এর অর্থনৈতিক প্রভাব

কর্ণফুলী টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় গোটা দেশের অর্থনৈতিতে বৈপ্লবিক সাড়া জাগাবে। দেশ যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।

কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বারান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।

বিনিয়োগের প্রসার

টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর ওপারে বিনিয়োগ শুরু করেছে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে নদীর ওপারে আংশিক চালু রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড। পাশাপাশি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। টানেল নির্মাণের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকার আনোয়ারায় একটি ইকোনমিক জোন স্থাপন করছে। পাশাপাশি চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ ‘চায়না ইকোনমিক জোন’ বাস্তবায়িত হচ্ছে।

শিল্পায়ন

তথ্যমতে, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এ টানেলের মধ্যদিয়ে দুই পাড়ের সেতুবন্ধন রচিত হবে। শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে।

৭৮৩ একর জমি নিয়ে আনোয়ারায় চায়না ইকোনোমিক জোন স্থাপিত হচ্ছে। উক্ত এলাকায় চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এখানে রপ্তানিমুখি জাহাজ শিল্প, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নেশ ও সিমেন্ট শিল্প সহ ৩১টি শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে টানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে টানেলের পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তের ৭২৭ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলার যোগাযোগ রক্ষা পাবে।

বেকারত্ব দূরীকরণ

বিভিন্ন ধরনের ২৩টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ৩টি বড় কোম্পানী, গায়া প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানী ও ডেইগু প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানী তাদের ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় রপ্তানিমুখি জুতা, তৈরী পোশাক শিল্প, টেক্সটাইল সহ নানা উৎপাদনমুুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান উক্ত এলাকায় স্থাপিত হবে।

তাতে অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকার যুবক মহিলাদের প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজিকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প নির্মিত হলে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সৌন্দর্য বর্ধন ও সবুজায়ন

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পরিচালিত বঙ্গবন্ধু টানেলের চারলেইন ১০ কি.মি. সড়কের বিভিন্ন রকম সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হবে। টানেলের টিউবসহ ৩০ মিটার প্রস্থ এ সড়কে কাফকো সেন্টার-কান্তিরহাট থেকে জেলেঘাটা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ফ্লাইওভার হবে। এ সড়কের দু’পাশে ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি সবুজায়নের ব্যবস্থাও রয়েছে।

পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন

দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর এই ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয় এতে কমে আসবে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও।

জিডিপি-তে ইতিবাচক প্রভাব

কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে এলাকার আশে পাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে । ফলে দারিদ্র দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে । DPP মোতাবেক এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে Financial এবং Economic IRR এর পরিমান দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬.১৯% এবং ১২.৪৯%। তাছাড়া, Financial ও Economic “Benefit Cost Ratio (BCR)” এর পরিমান দাড়াবে যথাক্রমে ১.০৫ এবং ১.৫০ । ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে জিডিপি তে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে ।

উপসংহার

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এবং দেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক রাজধানী। ৫৭ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের শহর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক বড় কর্মস্থল। এই যে স্বপ্নের টানেল, যার সুবিধাগুলোও স্বপ্নের মতো। চট্টগ্রামের মানুষ যা আগে স্বপ্নেও ভাবেনি তা এখন বাস্তবে দেখতে পাবে।

এই টানেলের কাজ সম্পন্ন হলে নদীর এপার এবং ওপারের দুইটি শহর এক সিটিতে পরিণত হতে পারে। সর্বোপরি সৃষ্টি হবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কর্মের সুযোগ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। চট্টগ্রামের মানুষকে একদিন যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ‘দ্যা রোল মডেল অব লিডারশিপ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আজ সেই স্বপ্ন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান

১. কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের যাত্রা কবে শুরু হয়? – ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী।
২. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কবে উদ্ভোদন করা হয়? – ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী।
৩. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কে উদ্ভোদন করেন? – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪. কর্ণফুলী টানেল অবস্থিত- চট্টগ্রাম জেলায়।
৫. কর্ণফুলী টানেল সংযুক্ত হচ্ছে – পতেঙ্গা ৪১ নং ওয়ার্ডের নেভাল একাডেমির বন্দর অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের আনােয়ারা পর্যন্ত।
৬. কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে – ২ লেনের রাস্তা।
৭. কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে – ৪ লেনের ক্যারেজওয়ে এবং একটি পৃথক সার্ভিস লেন।
৮. কর্ণফুলী টানেল মোট দৈর্ঘ্য – ৯.৩৯২ কিলোমিটার।
৯. কর্ণফুলী মূল টানেলের দৈর্ঘ – ৩.৪৩ কিলোমিটার।
১০. কর্ণফুলী টানেলে বায়ুচলাচল ফ্যান আছে – মোট ৮টি।
১১. কর্ণফুলী টানেলের জেট ফ্যান সংখ্যা – ১২৬ টি।
১২. কর্ণফুলী টানেলে যানবাহন চলাচল ক্ষমতা – প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮,০০০ টি।
১৩. কর্ণফুলী টানেলে যানবাহনের গতিসীমা – ৬০ কি.মি./ ঘন্টা।
১৪. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ করছে – চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (CCCC)।
১৫. কর্ণফুলী টানেলের মোট ব্যয় প্রায় ১০,৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
১৬. কর্ণফুলী টানেলে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ মোট ব্যয়ের ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ।
১৭. চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে সহায়তা পায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি।
১৮. চায়না এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগের সুদের হার – ২%।
১৯. কর্ণফুলী টানেলটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ০.১৬৬ শতাংশ অবদান রাখবে।
২০. কর্ণফুলী টানেলের দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার।
২১. কর্ণফুলী টানেলের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।
২২.কর্ণফুলী টানেলের ইংরেজি অপর নাম -Two towns – one city.
২৩. কর্ণফুলী টানেলের আসল নাম – ববঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেল।
২৪. কর্ণফুলী টানেলের নির্মান কাজ শেষ হবে – ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।

 

প্রশ্নোত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় কবে?
উত্তর : ১৪ অক্টোবর ২০১৬

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কে?
উত্তর : বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

প্রশ্ন : টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় কবে?
উত্তর: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেল কোন কোন এলাকাকে সংযুক্ত করেছে?

উত্তর : চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা।

প্রশ্ন : টানেলের মোট দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার?
উত্তর : ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার বা ২ দশমিক শূন্য ৬ মাইল।

প্রশ্ন : মূল টানেলে কতটি টিউব/সুড়ঙ্গ আছে?

উত্তর : দুটি।

প্রশ্ন : কর্ণফুলী টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য কত কিলোমিটার?
উত্তর : ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তর : উভয় দিকে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেলের লেনসংখ্যা কত?
উত্তর : ৪ (৪টিই সড়কপথ)।

প্রশ্ন : কর্ণফুলী নদীর কত ফুট গভীরে এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে?
উত্তর : ১৫০ ফুট গভীরে।

প্রশ্ন : কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোন প্রতিষ্ঠান?

উত্তর : চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।

প্রশ্ন : টানেলের মোট নির্মাণ ব্যয় কত ?
উত্তর : ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু টানেলের ঋণসহায়তা প্রদান করে কোন প্রতিষ্ঠান?
উত্তর : চীনের এক্সিম ব্যাংক (ব্যাংকটি ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের)।

প্রশ্ন : কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণচুক্তি সই হয় কবে?
উত্তর : ১৪ অক্টোবর ২০১৬।

প্রশ্ন : এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে সুদের হার কত শতাংশ?
উত্তর : ২ শতাংশ।

প্রশ্ন : টানেলটি নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহর কোন মডেলে গড়ে উঠেছে?
উত্তর : চীনের সাংহাই শহরের আদলে, ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বা এক নগর দুই শহর।

প্রশ্ন : এই টানেল দেশের জিডিপিতে বার্ষিক কত শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে?
উত্তর : ০.১৬৬ শতাংশ।

প্রশ্ন : কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ তদারক করছে কোন প্রতিষ্ঠান?
উত্তর : বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন : টানেলের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ কত কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলবে?
উত্তর : ৮০ কিলোমিটার।

প্রশ্ন : নদীর তলদেশ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম টানেল কোনটি?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।

প্রশ্ন : দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক টানেল কোনটি?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।

প্রশ্ন : জরুরি প্রয়োজনে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়ার জন্য কয়টি সংযোগ রাখা হয়েছে?
উত্তর : ৩টি।

প্রশ্ন : জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় টানেলের ভেতরে কতটি সেচপাম্প বসানো হয়েছে?
উত্তর : ৫২টি।

প্রশ্ন : টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-কক্সবাজারের কত কিলোমিটার দূরত্ব কমে গেছে?
উত্তর : ১৫ কিলোমিটার।

প্রশ্ন : কোন নদীর তলদেশে এ টানেলের অবস্থান?
উত্তর : কর্ণফুলী নদী।