সরকারি চাকরির প্রস্তুতি জন্য দারুণ এবং কার্যকরী কিছু টিপস

সাইমন সিনেকের স্টার্ট উইথ হোয়াই  বইটা যারা পড়েছেন, তারা জানেন আমরা কোনো কাজের ক্ষেত্রে কী করতে চাই, এবং কীভাবে করতে চাই- তার থেকেও জরুরি বিষয় হলো কেন তা করতে চাই। অথবা বইটাও পড়তে হবে না, এই বিষয়ক তার টেড টকের ভিডিওটা যারা দেখেছেন তাদেরও এই বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকবে। কারণ কোনো কাজে আমরা কতটা লেগে থাকি তা নির্ভর করে সেই কাজের প্রতি আমাদের ডেডিকেশনের উপর। আজকের নিবন্ধের আলোচ্য ব্যক্তি সাইমন সিনেকও নয়, আর স্টার্ট উইথ হোয়াই বইও নয়, আজকের বিষয় হলো সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কীভাবে নিলে তা হবে সবথেকে সেরা। কিন্তু শুরুতে কিছু কথা না বললেই নয়, তাই এতসব কিছুর অবতারণা!

 

চাকরির বাজারে সোনার হরিণ নামে খ্যাত সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হয়, এই নিবন্ধে আমরা জেনে নেবো সে সম্পর্কেই। প্রথমে জানবো কেন সরকারি চাকরি? কেন সবার লক্ষ্য থাকে একটি সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেয়া? এরপর আমরা দেখবো সরকারি চাকরির প্রকারভেদ, সরকারি চাকরি মানে কি শুধুই বিসিএস? নাকি আরও অন্য কোনো ক্ষেত্রও আছে? এতসব কিছুর পর আমরা আসল কথায় আসবো, মানে ঠিক কী কী কর্মপন্থা ধরে এগোলে আমরা কাঙ্ক্ষিত সরকারি চাকরি পেয়ে যেতে পারি, আর সবশেষে থাকবে কিছু সাধারণ ভুল যা বর্জনীয়। তো, চলুন প্রিয় চাকরিপ্রার্থী, আমাদের পথচলা শুরু করা যাক!

 

কেন সরকারি চাকরি?

চাকরির মধ্যে কেন সরকারি চাকরিই করতে হবে, এর জবাবে প্রথমেই আসবে জব সিকিউরিটির কথা, এবং এরপর প্রত্যক্ষভাবে জনসেবার সুযোগ। অন্যান্য চাকরিতেও আপনি জনসেবা করতে পারবেন, তবে সরকারি চাকরিগুলোতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক লোকজনের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন। আর অন্য যেকোনো বেসরকারি চাকরির থেকে জব সিকিউরিটি যে হাজার গুণে বেশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভাতাদি, আমৃত্যু (এবং কিছু ক্ষেত্রে নিজের পাশাপাশি স্ত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত) পেনশন ইত্যাদি কারণে ড্রিমজবের তালিকায় বেশ উপরের দিকেই থাকে সরকারি চাকরি। এখানে যেমন রয়েছে কর্তৃত্বের হাতছানি, তেমনি সম্মানের ছোঁয়া।

 

সরকারি চাকরির রকমফের

অনেকে সরকারি চাকরি মানেই ভাবেন বিসিএস, এই ভ্রান্তি দূর করতেই এই সেগমেন্ট। সরকারি চাকরির মাঝে যেমন আছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তথা বিসিএস এর ২৬টি ক্যাডার, তেমনি আছে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের চাকরি, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি। উল্লেখ্য, পুলিশের এসপি পদে চাকরি, সামরিক বাহিনী ছাড়াও সামরিক বাহিনির বিভিন্ন পোস্টে চাকরি ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, কিছু বিশেষায়িত খাতও আছে। যেমন, বিজ্ঞানী পদে- উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিভিন্ন পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে, তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানদের জন্য প্রকৌশলী পদে কাজের সুযোগ আছে। এবং রোমাঞ্চকর স্পাই হিসেবে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাতেও (ডিজিআই, এনএসআই) কাজের প্রলুব্ধকর অফার রয়েছে! এতসব পছন্দ না হলেও আছে রয়েছে রেলওয়ে অফিসার কিংবা নৌ-অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ।

 

লক্ষ্য যেন থাকে ঠিক

বিসিএস, ব্যাংক, পুলিশ নাকি অন্য কোথাও?

শুরুতেই লক্ষ্য ঠিক রাখা খুব জরুরি। কিছুদিন একটির প্রস্তুতি নিয়ে আবার কিছুদিন অন্যটার প্রস্তুতি- এভাবে এগোতে থাকলে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। ফলত কোনোটাই ঠিকমত হয় না। এজন্য লক্ষ্য স্থির রেখে এগোতে হবে। বিসিএস, ব্যাংক, পুলিশ বা অন্য যে সেক্টরকেই টার্গেট ধরে আগানো হোক না কেন, প্রস্তুতি যেন হয় গোছানো। কারণ, এদের সবগুলো কিন্তু একই রকম নয়। তাই বুঝে-শুনে এগোলে ভালো ফল আশা করা।

 

প্রশ্নকাঠামো সম্পর্কে দরকার সুস্পষ্ট ধারণা

যেকোনো পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতি সম্পর্কে এবং বিশেষ করে নম্বরবণ্টন সম্পর্কে থাকতে হবে সুচারু ধারণা। নচেৎ যেকোনো রকমের প্রস্তুতিই বিফলে যেতে পারে। সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক), গণিত ও মানসিক দক্ষতা, কম্পিউটার এ জাতীয় বিষয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে। আপনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেটার মানবণ্টন বিশদে জেনে নিয়ে পড়া শুরু করবেন। সেই বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে পাবেন বিস্তারিত সিলেবাস, আর তৎসংশ্লিষ্ট বইয়ে মিলবে বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ।

 

কীভাবে প্রস্তুতি নিলে সেরা ফল মিলবে?

সেরা চাকরির জন্য দরকার সেরা প্রস্তুতি। কথায় আছে, ওয়ার্ক হার্ড এর থেকে বেশি কার্যকর হলো ওয়ার্ক স্মার্ট, আর সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে কঠোর পরিশ্রম করা জরুরি। কারণ, এটা মাথায় গেঁথে নিতে হবে যে, শর্টকাট পড়ে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব না। তাই লক্ষ্য স্থির রেখে উপযুক্ত স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী কাজ করলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ। সাথে ইতিবাচক মনোভাব থাকাটা খুব জরুরি, যেন মানসিক দিকটা শক্তিশালী থাকে।